সাব্বির কামাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
আজ (বৃহস্পতিবার )১৭ এপ্রিল একাত্তরের এইদিনে গফরগাঁও বাজারে পাক হানাদার
বাহিনীর বোমা হামলায় ভয়াবহ গণহত্যা সংগঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে
মুজিব নগর সরকার গঠনের দিন ১৭ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনী গফরগাঁও
বাজারে বর্বরোচিত বিমান হামলা করে। এদিন প্রায় ৫০ জনেরও বেশী মানুষের
প্রাণহানি ঘটে। মুজিব নগর দিবস উপলক্ষে গফরগাঁও বাজারে বাংলাদেশের
মানচিত্র সম্বলিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়। ঘটনার দিন সকালে পর পর
বেশ কয়েকটি পাক জঙ্গী বিমান বাজারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই
বোমা আর মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁঝড়া করে দেয় বাজারের নিরীহ মানুষদের।
তাদের মধ্যে ১৯জনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।
গফরগাঁওয়ের প্রবীণ লেখক মোহাম্মদ ফারুক তার লেখায় বিমান আক্রমনে হতাহতদের
কথা উল্লেখ করেছেন ১৫০ জনেরও বেশী । তবে তৎসময়ে সেই সব ক্ষত-বিক্ষত লাশের
মধ্যে শনাক্ত করা গেছে ১৯ জনকে। সেদিনের বোমা হামলায় শহীদরা হলেন, ১।
শহীদ আব্দুল বেপারী ( রাঘাইচটি), ২। আব্দুল মজিদ (শিলাসী), ৩। মো: ছোবেদ
আলী ( শিলাসী), ৪। মীর শাসছুদ্দিন ( পুখুরিয়া), ৫। মীর জিয়াউল হক
(ঘঅগড়া), ৬। যমুনার মা ( ষোল হাসিয়া), ৭।আব্দুল হাই ( শিলাসী), ৮। আব্দুল
মতিন (রাঘাইচটি), ৯। আব্দুল জলিল-কুলি (তেতুলিয়া), ১০। ইছর আলী (
শিলাসী), ১১। ভুলু (তেতুলিয়া), ১২্। গোপেন চন্দ্র দেবনাথ ( ঠাকা), ১৩।
আব্দুল গফুর ( শিলাসী), ১৪। আব্দুল হেলিম ( চং বিরই), ১৫। মংলার বাপ (
আঠার বাড়ি), ১৬। হাই মিয়া ( খারুয়া), ১৭। কাইল্যা ( খারুয়া মুকন্দ), ১৮।
গফুর আলি ( জন্মেজয়) ১৯। জয়নাল ( শ্রীপুর) ।
সেদিন বিমান হামলার পর হতাহত মানুষদের উদ্ধার করেছিলেন সালটিয়া ইউনিয়নের
রৌহাা গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ মীর মোনায়েম সালেহীন
সুবল। সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ’বোমা আর গুলিতে অসংখ্য মানুষের
ছিন্ন ভিন্ন শরীর আর রক্ত স্রোতের মাঝে কয়েকজনকে সঙ্গী করে উদ্ধার
কাজে নেমেছিলাম। চারিদিকে মানুষের কান্নার রোল,হতাহত মানুষের গুলিবিদ্ধ শরীর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এদের মধ্যে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা
করি। সেদিন ১৯ জনকে শনাক্ত করা গিয়েছিল। নিহতদের পরিবারের আক্ষেপ স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই আত্মত্যাগীরা শহীদের মর্যাদা পায়নি।
ইতিহাসের কোথাও লেখা হয়নি এই বীর শহীদদের নাম।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে এমপি আবুল হাশেম এর উদ্যোগে গফরগাঁও
বাজারের প্রবেশ মুখে শহীদ আব্দুল বেপারীর নামে একটি ত্বোরণ স্থাপন করা
হয়েছিল। রাস্তা প্রশস্তকরণের সময় ২০২২ সালে
তোরণটি ভাঙ্গা পড়ে যায়।
এখন আর এই দিবসটির কথা কেউ সেভাবে স্মরণ করেনা।
১৭ এপ্রিল শহীদ আব্দুল বেপারীর ৫৪ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে গ্রমের বাড়ি রাঘাইচটিতে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে তার পরিবার।
শহীদ আবদুল বেপারীর সন্তান আমিনুল হক কামাল বলেন,‘তোরণটি ছিল
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের অংশ। শহীদ পরিবারের পক্ষে তোরণটি পুন:নির্মাণের দাবি
জানাচ্ছি।’
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার
সাইফুল আলম বলেন,‘১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসেই গফরগাঁওয়ে বর্বর গণহত্যা হয়। এই দিবসটি নীরবে চলে যায়,আমরা কেউ স্মরণ করিনা এই শহীদদের। আগামী গণহত্যা দিবসটি যেন রাস্ট্রীয়ভাবে পালন কারা হয়, এ বিষয়ে জোড়ালো দাবি জানাই। ‘